/প্রাসঙ্গিক তথ্য

প্রাসঙ্গিক তথ্য

প্রাসঙ্গিক তথ্য ১:

একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে গড়ে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত থাকে। প্রধানত অস্তিমজ্জায় রক্ত উৎপন্ন হয় ।

★★★ রক্তের উপাদান :

রক্ত প্রধানত দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত । যথা :

★ রক্তরস বা প্লাজমা: 

রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বা প্লাজমা বলে ।এই রক্তরসে রক্তকণিকা ভাসমান অবস্থায় থাকে ।রক্তরসে পানির পরিমাণ ৯২% । এছাড়াও রক্তরসে গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল, আমিষ (যেমন : অ্যালুবুমিন, ফিব্রিনোজেন), খনিজলবণ, হরমোন, ভিটামিন, ইউরিয়া, এন্টিবডি, অক্সিজেন, কার্বনডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ।

★★ রক্তকণিকা: 

রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা বলে । রক্তের ৪৫% হলো রক্তকণিকা । মানুষের রক্তে তিন ধরণের কণিকা থাকে । লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অনুচক্রিকা

★★ রক্তের কাজ:

রক্ত সারা দেহে পানি ও তাপের সমতা রক্ষা করে ।

লোহিত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে কোষে কোষে অক্সিজেন পরিবহণ করে ।

শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায়য় রোগজীবাণু ধ্বংস করে দেহকে সুস্থ রাখে ।

দেহের কোন স্থান কেটে গেলে অনুচক্রিকা সে সস্থানে রক্ত জমাট বাঁধায় । ফলে ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ হয় ।

রক্তরসের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড, ইউরিয়া, হজমকৃত খাদ্যবস্তু(যথা : গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড, ফ্যাটি এসিড, গ্লিসারল), হরমোন ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয় ।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ২:

রক্তের গ্রুপের শতকরা হারের রয়েছে ভিন্নতা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন গ্রুপের রয়েছে প্রাধান্য। তবে এই প্রাথক্য খুব বেশি নয়। নিম্নের পরিসংখ্যানটি বাংলাদেশের জনগনের রক্তের শতকরা হার। 

O  পজেটিভ ২৯.২১% 

A  পজেটিভ ২৬.৩% 

B  পজেটিভ ৩৩.১২% 

O নেগেটিভ ০.৫৩% 

A  নেগেটিভ ০.৪৮% 

AB পজেটিভ ৯.৫৯% 

B  নেগেটিভ ০.৬%

 AB নেগেটিভ ০.১৭%

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৩:

Group O কে “universal donor” বা সর্ব দাতা গ্রুপ বলা হয়। কারন এই গ্রুপের রক্ত সব গ্রুপের লোক গ্রহন করতে পারে। এজন্য রেড ক্রস সর্বদাই Group O রক্তের যোগান দাতাদের খোঁজ করে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে যদি রক্ত গ্রুপ জানা না থাকে তবে রোগীর শরীরে O negative রক্ত দেয়া হয়। অনেক সময় শিশুর জন্মের সময় জতিলতা দেখা দিলে O negative  রক্ত জরুরি ভিত্তিতে দেয়া হয়।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৪:

রক্ত পরিসঞ্চালন মানে হচ্ছে, একজনের দেহ থেকে রক্ত নিয়ে সেই রক্তের গ্রুপ ও আর এইচ ফ্যাক্টর দেখে এবং ক্রস ম্যাচিং করে একই গ্রুপধারী অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করানো। এক্ষেত্রে গ্রুপ ম্যাচিং করা খুবই জরুরি।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৫:

O positive গ্রুপ সবচেয়ে বেশি মানুষের আছে। অপরদিকে AB negative গ্রুপ সবচেয়ে কম  মানুষের আছে। Hispanic মানুষের মাঝে O গ্রুপ সবচেয়ে বেশি , অপরদিকে Asian মানুষের মাঝে  B গ্রুপ সবচেয়ে বেশি।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৬:

★ রক্তের গ্রুপ এবং বিয়ে, বাচ্চা:

রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে না মানেই বিয়ে করা যাবে না- এটা ভুল ধারণা। রক্তের গ্রুপ ম্যাচ না করলে বাচ্চা নেয়ার সময় একটু সতর্ক হলে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

★★ ম্যাচ করে না:

ছেলে/মেয়ে
এ/ও, বি
বি/ও, এ
এবি/ও, এ, বি
Rh পজেটিভ/Rh নেগেটিভ

★★ ম্যাচ করে:

ছেলে /মেয়ে
এ/এ, এবি
বি/বি, এবি
ও/ও, এ, বি, এবি
এবি/ এবি
Rh পজেটিভ/Rh পজেটিভ
Rh নেগেটিভ/Rh পজেটিভ,Rh নেগেটিভ

অনেকেরই ধারণা যে মা-বাবার রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের নানা সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আসলে ধারণাটি অমূলক। তবে মায়ের নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ ও বাবার পজিটিভ গ্রুপ থাকলে অনেক সময় শিশু বাবার গ্রুপ পায় এবং এ কারণে সমস্যা হতে পারে। আবার মায়ের ও পজিটিভ কিন্তু শিশুর এবি বা বি পজিটিভ হলেও জন্ডিস বা অন্য কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

রক্তের গ্রুপ না মিললে বাচ্চা নেয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিলেই আর কোনো সমস্যা হয় না।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৭:

★★ Rh incompatibility:

প্রধানত ব্লাড গ্রুপকে দুইভাগে ভাগ করা হয়। একটা হল ABO system (A, B, AB & O), অপরটি হল Rh factor {Rh positive(+ve) & Rh negative(-ve)}. অর্থ্যাৎ Rh factor ঠিক করবে ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হবে নাকি নেগেটিভ হবে। তাহলে ব্লাড গ্রুপগুলো হল: A+ve, A-ve, B+ve, B-ve, AB+ve, AB-ve O+ve, O-ve.

যখন কোনো Rh নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তিকে Rh পজেটিভ গ্রুপের রক্ত দেয়া হয় তখন প্রথমবার সাধারণত কিছু হবে না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে রোগীর শরীরে এন্টিবডি তৈরি হবে যার ফলে যদি কখনো রোগী আবার পজেটিভ গ্রুপের রক্ত নেয় তাহলে তার ব্লাড সেলগুলো ভেঙ্গে যাবে। এতে নানারকম সমস্যা হবে। যেমন: জ্বর, কিডনি ফেইলিউর, আকস্মিক মৃত্যু ইত্যাদি। এই সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ABO incompatibility.

স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপও পজেটিভ হতে হবে। আর যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। তবে স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে কোনোভাবেই স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়া চলবে না। রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামীর যদি পজেটিভ হয় তাহলে ‘লিথাল জিন’ বা ‘মারন জিন’ নামে একটি জিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাঁধা দেয় বা জাইগোট মেরে ফেলে। সে ক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হয়।

যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হয় তাহলে সাধারণত বাচ্চার ব্লাডগ্রুপ ও পজেটিভ হবে। যখন কোনো নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপের মা ধারণ করবে পজেটিভ Fetus (ভ্রুণ) তখন সাধারণত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ডেলিভারির সময় পজেটিভ Fetus-এর ব্লাড, placental barrier ভেধ করে এবং placental displacement এর সময় মায়ের শরীরে প্রবেশ করবে। মায়ের শরীরে ডেলিভারির সময় যে ব্লাড প্রবেশ করবে, তা ডেলিভারি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে Rh এন্টিবডি তৈরি করবে। যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবে, তখন যদি তার fetus এর ব্লাডগ্রুপ পুনরায় পজেটিভ হয়। তাহলে মায়ের শরীরে আগে যে Rh এন্টিবডি তৈরি হয়েছিলো সেটা placental barrier ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন fetus-এর শরীরে Rh antibody ঢুকবে তখন fetal-এর RBC এর সঙ্গে agglutination হবে, যার ফলে RBC ভেঙ্গে যাবে। একে মেডিকেল টার্ম-এ “Rh incompatibility” বলে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ৮:

★ সন্তানের ওপর মা-বাবার রক্তের গ্রুপের প্রভাব:

মায়ের রক্তের গ্রুপ এবং তাঁর সন্তানের রক্তের গ্রুপ দুটোর সমীকরণের ফলাফল গর্ভস্থ ভ্রূণ বা নবজাতকের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ধরা যাক, গর্ভধারিণী মায়ের রক্তের গ্রুপ আরএইচ নেগেটিভ এবং তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ আরএইচ পজেটিভ। এই যোগসূত্রে আরএইচ পজেটিভ শিশুর জন্ম হতে পারে। এই মা যদি আগে থেকে আরএইচ রক্তকোষ দ্বারা সংবেদনশীল থাকেন, তাহলে গর্ভস্থ আরএইচ পজেটিভ বাচ্চা আরএইচ হিমোলাইটিক অসুখে কোনো না কোনো মাত্রায় আক্রান্ত হবে। আর মা যদি ডেলিভারির পরে প্রতিক্রিয়ার আওতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সব আরএইচ পজেটিভ গর্ভস্থ শিশু ঝুঁকিতে থাকবে।

★★ আরএইচ(রিসাস) ব্লাড গ্রুপ:

ও-এ-বি ব্লাড সিস্টেমের সাথে কারো শরীরে রক্ত সঞ্চালন কিংবা নবজাতক শিশুতে মারাত্নক হেমোলাইটিক ডিজিস তৈরিতে আরএইচ ব্লাড গ্রুপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

★★ ‘এবিও’ রক্তের গ্রুপ সিস্টেম:

একদা যুদ্ধক্ষেত্রের অনুমান-পর্যবেক্ষণ—সিদ্ধ তথ্য গবেষণায় সিদ্ধি লাভ করে জানা গেছে, মূল রক্তের গ্রুপ হলো চারটি: ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’।

‘ও’ রক্তের গ্রুপ যেকোনো রক্তের শ্রেণীতে মেশালে তা জমাট বাঁধে না। তাই একে ‘ইউনিভার্সেল ডোনার’ বলা হয়।

‘এ’ গ্রুপের রক্ত ‘এ’ অথবা ‘এবি’র সঙ্গে মিশতে পারে যদি তা ‘বি’ বা ‘ও’-এর সঙ্গে মেশে, তবে জমাট বাঁধবে।

একইভাবে ‘বি’ রক্তকোষ শ্রেণী নিরাপদে ‘বি’ বা ‘এবি’র সঙ্গে মেশানো যায়, কখনো ‘ও’ বা ‘এ’-এর সঙ্গে নয়।

এবি রক্তের শ্রেণী শুধু এবির সঙ্গে মেশে আর কারও সঙ্গে নয়।

তবে প্রধান এই চার রক্তের গ্রুপ অ্যান্টিজেনের বাইরেও ক্যাপিটাল সি—স্মল সি, ডি, বড় ই-ছোট ই, বড় কে = ছোট কে, এম, এন এবং আরও অনেক জট পাকানো রক্তশ্রেণীর অস্তিত্ব রয়েছে।

★★ আরএইচ ‘ডি’ রক্তের শ্রেণীর গরমিল:

ভাগ্য ভালো, সব রক্তশ্রেণী দুর্যোগ তৈরি করে না। কিন্তু ‘ডি’ অ্যান্টিজেনের গরমিলের চিত্র খুব ভয়াবহ হতে পারে।

তবে মাতা-পিতা দুজনই যদি ‘ডি’ নেগেটিভ হন, বাচ্চা কখনো ‘ডি’ পজেটিভ হবে না। সুতরাং বিপদমুক্ত।

কিন্তু ‘ডি’ নেগেটিভ মায়ের সঙ্গে ‘ডি’ পজেটিভ স্বামীর যোগসূত্রে বাচ্চা ‘ডি’ পজেটিভ, ‘ডি’ নেগেটিভ দুটোর যেকোনো একটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ডি’ পজেটিভ বেবি হলেই কেবল বিপদ।

গর্ভস্থ ভ্রূণ ‘ডি’ পজেটিভ হলেও প্রথম বাচ্চা এতে আক্রান্ত হয় না। প্রথম বাচ্চা জন্মদানের সময় আরএইচ পজেটিভ রক্তকোষজাত অ্যান্টিডি-অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে, যা পরবর্তী সময়ে গর্ভস্থ শিশু থেকে বা রক্ত সরবরাহতন্ত্রে প্রাপ্ত যেকোনো ‘ডি’ পজেটিভ রক্তকোষ পেলে সমূহ সংহারে উদ্যোগী হয়। এভাবে আরএইচ নেগেটিভ মা তাঁর ডি-অ্যান্টিজেন নিয়ে কতটা সংবেদনশীল হয়েছেন, তার মাত্রা মায়ের গর্ভকালীন সিরাম ইনভাইরেক্ট কুম্বসটেস্ট দ্বারা নির্ণয় করা যায়। প্রতিক্রিয়ার মাত্রা যত বেশি হবে, গর্ভস্থ ভ্রূণ তত বেশি ক্ষতির শিকার হবে; যার সর্বাধিক নমুনা হচ্ছে ‘হাইড্রপস ফিটালিস’।

★★ প্রতিরোধ:

সবাই অবগত আছেন থ্যালাসেমিয়া সন্তান জন্মদান প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বর বা কনে উভয়ে এ রোগের বাহক কি না জেনে নিয়ে চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও গর্ভপূর্ব হতে মা ও বাবার রক্তশ্রেণী জানা গেলে মা, বাবা ও অনাগত সন্তানের রক্তশ্রেণীর গরমিলজনিত সংকট মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ।

সব আরএইচ নেগেটিভ মাকে গর্ভকালীন ২৮ ও ৩৪ সপ্তাহে, প্রসব-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, গর্ভপূর্ব সময়ে গর্ভপাত, জরায়ু থেকে রক্তপাত হয়ে থাকলে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ‘অ্যান্টিডি ইমিউনোগ্লোবুলিন’ দেওয়ার মাধ্যমে ভয়ানক এ অসুখ থেকে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ১০:

★★ কখন, কোথায় রক্ত দেবেন:

প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোন সুস্থ মানুষই রক্ত দিতে সক্ষম। তবে এ রক্ত দানের জন্য প্রয়োজন কিঞ্চিৎ সদিচ্ছা ও মানবিকতাবোধের সমন্বয়। রক্ত কখন, কোথায়, কিভাবে দেবেন তা জানিয়ে দেয়া হল এখানে-

★★★ কারা রক্ত দিবেন:

 মহিলা ও পুরুষ যাদের বয়স ১৮-৪৫ বছর।

পুরুষ যাদের ওজন ৪৭ কেজি বা তার উর্ধ্বে, মহিলা যাদের ওজন ৪৫ কেজি বা তার উর্ধ্বে।

যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় আছে।

★★★ কারা রক্ত দিবেন না:

৩ বছরের মধ্যে কারো জন্ডিস হলে।

রক্তবাহিত বা জটিল রোগ যেমন- ম্যালোরিয়া, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিক, রক্তাস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, পেপটিক আলসার, হিস্টেরিয়া, চর্মরোগ, রিউমেটিক ফিভার, হাইপারটেনশন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাদকাসক্ত, এইডস, রক্তক্ষরণ জনিত কোন সমস্যা হলে কিংবা দাঁত তুললে।

৪ মাসের মধ্যে যারা রক্ত দিয়েছে।

৬ মাসের মধ্যে বড় সার্জারি হলে।

 মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী হলে, যাদের মাসিক চলছে।

★★★ রক্ত দানে সাবধানতা:

 ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিজ জীবাণুমুক্ত কিনা জেনে নিন।

খালি পেটে রক্ত দেবেন না।

 পরিচিত, বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানকে রক্ত দিন।

 রক্তদানের পূর্বে ডোনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনে নিন।

★★ রক্ত দানের সাধারণ তথ্য:

এক ব্যাগ দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না।

 রক্তদানের ৫-২১ দিনের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।

রক্ত দিলে হাড়ের বোনম্যারোতে নতুন রক্ত কনিকা তৈরির উদ্দীপনা আসে।

রক্তদানের পর প্রয়োজন মত পানি খেয়ে নিলে জলীয় অংশের ঘাটতি পূরণ হয়।

বিনামূল্যে রক্তদাতা নিজের জন্য রক্ত পাবেন।

 বিনামূল্যে ডাক্তারি পরামর্শ বা চিকিৎসা নেবার সুবিধা।

রক্তে হেপাটাইটিস বি, সি আছে কিনা, এইডস, সিফিলিসের জীবাণু বা ভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করে বিনামূল্যে জানতে পারবেন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ১১:

★★ নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনকে হ্যাঁ বলুন:

বিভিন্ন সময় আমাদেরকে রুগীর জীবন রক্ষার্থে রক্ত পরিসঞ্চালিত করতে হয়। রক্ত পরিসঞ্চালন মানে হচ্ছে, একজনের দেহ থেকে রক্ত নিয়ে সেই রক্তের গ্রুপ ও আর এইচ ফ্যাক্টর দেখে এবং ক্রস ম্যাচিং করে একই গ্রুপধারী অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করানো। একজন সুস্খ সবল ব্যক্তি যার বয়স ১৮-৫০ এর মধ্যে তিনি প্রতি চার মাস অন্তর এক ব্যাগ রক্ত মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে দান করতে পারেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ ব্যাপারে আমাদের দেশের মানুষ ততটা সচেতন নয়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমাদের দেশে প্রতিবছর রক্তের চাহিদা প্রায় ৪ লাখ ব্যাগ। এই চাহিদার বেশ বড় একটা অংশই যোগান দেয় পেশাদার রক্ত বিক্রেতারা। এসব লোক থাকে নেশাগ্রস্ত এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এরা অত্যন্ত নিচু শ্রেণীর অর্থনৈতিক লোক হওয়ায় এদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কম থাকে। এদের রক্ত দিলে রক্ত পরিসঞ্চালিত করে বহু লোক আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন এইডস, হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে।

এ জন্য বিশ্ব স্বাস্খ্য সংস্খা বা (WHO) রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে এর পাঁচটি স্ক্রিনিং টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। এই টেস্ট পাঁচটি হচ্ছেঃ­

1. Hhs Ag (হেপাটাইটিস বি আছে কি না দেখার জন্য)।

2. HCV (হেপাটাইটিস সি আছে কি না দেখার জন্য)।

3. VDRL ( সিফিলিসের জীবাণু আছে কি না দেখার জন্য)।

4. HIV (এইডসের জীবাণু আছে কি না দেখার জন্য)।

5. MP (ম্যালেরিয়া আছে কি না দেখার জন্য)।

তাই, রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে উপরোক্ত পাঁচটি স্ক্রিনিং টেস্ট করানো হয়েছে কি না তা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন। স্ক্রিনিং ছাড়া কখনো রক্ত নেবেন না, এমন কি আপনার অতি আপনজনেরও যদি হয় তাহলেও না । কারণ তার রক্তেও যুক্ত থাকতে পারে মারণঘাতী কোনো রোগের জীবাণু, যা সে নিজেও জানে না হয়তো বা। তাই, দূষিত রক্ত গ্রহণকে না বলুন, নিরাপদ রক্ত গ্রহণকে হ্যাঁ বলুন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ১২:

★★ রক্ত পরিসঞ্চালন – করণীয় ও সতর্কতা:

মানবদেহে রক্ত অপরিহার্য। দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য ফিরিয়ে আনা, হরমোন, লবণ ও ভিটামিন পরিবহন, রোগ প্রতিরোধ, এমনকি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতেই রক্তের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই কারও দেহে রক্তের অভাব ঘটলে তা পূরণের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যের রক্ত শিরার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করানো তথা রক্ত পরিসঞ্চালন হয়ে ওঠে অন্যতম উপায়।

রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে প্রয়োজনভেদে রোগীর শরীরে সম্পূর্ণ রক্ত বা রক্তের কোনো উপাদান যেমন—লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা বা রক্তরস দেওয়া হয়। যেকোনো কারণে অল্প সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত সম্পূর্ণ রক্ত দেওয়া হয় যেমন:দুর্ঘটনা, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত, প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। শল্যচিকিৎ সার সময়ও সম্পূর্ণ রক্তের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন রকমের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় সাধারণত লোহিত কণিকা দেওয়া হয়, যেমন: থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা, হুকওয়ার্মের কারণে অ্যানিমিয়া ইত্যাদি। অবশ্য আমাদের দেশে এসব রোগীকেও সম্পূর্ণ রক্ত দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডেঙ্গু, আইটিপিইত্যাদি রোগে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা দেওয়া হয়। রক্তরস দেওয়া হয় হিমোফিলিয়া ও অন্যান্য কোষাগুলেশন ডিস-অর্ডারে এবং আগুনে পোড়া রোগীকে।

★★★ জটিলতা:

জীবনরক্ষার অন্যতম উপায় এই রক্ত পরিসঞ্চালন আবার কখনো তৈরি করতে পারে জটিলতা। বিশেষ করে রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণ আমাদের দেশে এখনো একটি প্রধান সমস্যা। হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী সহজেই রক্তের রক্তগ্রহীতার দেহে প্রবেশ করতে পারে। এই পরিস্থিতির মূল কারণ রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তটি জীবাণুমুক্ত কি না তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা। অনুমোদনবিহীন ব্লাডব্যাংকগুলোতেই এসব রক্ত বিক্রি করা হয়। আর তা আসে মূলত নেশা আসক্ত পেশাদার রক্তদানকারীদের কাছ থেকে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বা ভেজাল রক্তও এসব ব্লাডব্যাংক থেকেই আসে। এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রোগীকে দিলে রক্ত হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এ ধরনের ঘটনা কম হলেও একেবারেই হয় না, তা নয়। এসব ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহকারী ও পরীক্ষাকারী ব্লাডব্যাংক, চিকিৎ সক অথবা সেবিকাদের ভুল বা অসতর্কতাই দায়ী। রোগী সাধারণত বুকে, পিঠে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করে থাকেন। চিকিৎ সক দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া যেকোনো পরিসঞ্চালনেই কাঁপুনি ও জ্বর আসা-জাতীয় ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে। যাদের কিছুদিন পরপর রক্ত নিতে হয়, তাদের দেহে লৌহের আধিক্যসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় অধিক রক্ত দ্রুত প্রবেশ করলে বৃদ্ধ অথবা হূদরোগীর হার্ট ফেইলিউর-জাতীয় সমস্যা হতে পারে। অবশ্য রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন রক্ত পরিসঞ্চালনের আগেই, যখন দেওয়ার জন্য রক্ত

খুঁজতে থাকেন। পাড়ায় পাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধ ব্লাডব্যাংক গড়ে উঠলেও নিরাপদ রক্ত এখনো দুর্লভ। বিশেষ করে জরুরি মুহূর্তে রক্ত প্রয়োজন হলে তা হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। এ ছাড়া যাঁদের ঘন ঘন রক্ত নিতে হয়, তাঁদের বেশির ভাগ সময় যায় রক্তের খোঁজে। দুর্লভ গ্রুপের রক্ত হলে তো কথাই নেই। রক্ত যে কারোরই যেকোনো সময় প্রয়োজন হতে পারে—এ কথা মনে রেখে আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি, তবে রক্ত পরিসঞ্চালনের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আমাদের যেসব উদ্যোগ নিতে হবে তা হলো—

নিজের, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা।

নিকটস্থ ব্লাডব্যাংকের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জেনে রাখা।

শুধু নিবন্ধনকৃত ব্লাড দান ও গ্রহণ করা।

পেশাদার রক্তদাতার রক্ত ক্রয় না করা।

নিজে নিয়মিত রক্ত দান করা ও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।

 ★★★ রক্ত নেওয়ার আগে সতর্কতা:

রক্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজন রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে কি না, দেখে নেওয়া।

অপরিচিত পেশাদার রক্তদাতার রক্ত না নেওয়া।

সবচেয়ে ভালো, নিজস্ব আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবের রক্ত নেওয়া।

স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে রক্তদাতার এইচবিএসএজি, এইচসিভি, এইচআইভি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে।

মনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের অভাব ও অনিরাপদ রক্ত দুটিই জীবনের জন্য সমান হুমকি। তাই রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত নয়, বরং ‘নিরাপদ রক্ত’।

★★★ জেনে রাখুন:

যেকোনো সুস্থ, সাবালক ব্যক্তি রক্ত দান করতে পারেন। তবে ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৫০ কেজি বা ১১০ পাউন্ড।

একবার সম্পূর্ণ রক্তদানের দুই মাস পরই আবার রক্ত দান করা সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অথবা কোনো ওষুধ সেবনকালে রক্ত দান করার আগে চিকিৎ সকের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় রক্ত দান করা যাবে না।

 যথাযথ নিয়ম মেনে জীবাণুমুক্ত উপায়ে রক্ত দান করলে রক্তদাতার কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

রক্তদানের পর ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে এবং পরবর্তী চার ঘণ্টা পর প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত।

রক্তদানের পরপরই শ্রমসাধ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

সম্পূর্ণ রক্ত অথবা লোহিত কণিকা সাধারণত ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। ব্যবহূত অ্যান্টি-কোয়াগুল্যান্ট ও প্রিজারভেটিভের ওপর নির্ভর করে তা ২১ থেকে ৪২ দিন ভালো থাকে।

সাধারণত চার ইউনিট রক্ত থেকে এক ইউনিট প্লাটিলেট পাওয়া যায়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় রাখলে তা পাঁচ দিন ভালো থাকে।

ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক বছর ভালো থাকে।

সম্পূর্ণ রক্ত দিতে সাধারণত দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। প্লাটিলেট দিতে কম সময় লাগে।

রক্ত গ্রহণ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া করতে কোনো সমস্যা নেই।

এমনকি সেবিকার সহায়তা নিয়ে বাথরুমেও যাওয়া যাবে।

প্রাসঙ্গিক তথ্য ১৩:

আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে অথবা আত্নীয় স্বজনদের রক্তের প্রয়োজনে হতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে । অনেক সময় অতীব দরকারী হলে রক্তের দেখা পাওয়া যায়না । তাই  কিছু জরুরি ফোন নাম্বার দিতে যেগুলো সবারই উচিত সেভ করে রাখা যাতে করে  প্রয়োজন হলে পাওয়া যায়  জীবনরক্ষাকারী রক্ত।